ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে প্রতারণা, লাখ টাকা হাতিয়ে নিলো তরুণী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘সিক্রেট গ্রুপ’ বানিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ইউজারদের কাছ থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ সম্প্রতি JFWBD (জাস্টিজ ফর উইমেন বাংলাদেশ) নামের একটি ফেসবুক সিক্রেট গ্রুপের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠে৷ ২ বছর আগে ‘ইফরিত জাহিন কুঞ্জ’ নামক এক মেডিক্যাল কলেজ পড়ুয়া তরুণী এই গ্রুপটি তৈরী করেন৷ অল্প সময়ে অধিক মেম্বার যুক্ত করেন গ্রুপে৷ পরবর্তিতে সেই গ্রুপের প্রাইভেসি পরিবর্তন করে সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজ করার ঘোষণা দেন৷ দেশে আইন ব্যবস্থা থাকার পরেও বে-আইনী ভাবে সেই গ্রুপ থেকে শুরু করেন নানা কার্যক্রম এবং অর্থের বিনিময়ে ভলেন্টিয়ার সংগ্রহ করেন৷ গ্রুপের মাধ্যমে সহায়তা করার ক্ষেত্রে নিয়ে থাকেন বিভিন্ন অংকের টাকা৷ তাদের গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্য মেয়ে। তারা নানান ভাবে হয়রানির শিকার হয়ে তাদের কাছে আসে সাপোর্টের জন্য। যেমন, ফিজিকাল রিলেশন, ন্যুড ছবি দিয়ে হ্যারেজ, হাসবেন্ড-ওয়াইফ ঝামেলা, পরকীয়া, প্রেমকীয়া ইত্যাদি। তারা শুরুতেই মেয়েদের থেকে বিস্তারিত জেনে নেয় এবং আপত্তিকর সেসব ছবি সংগ্রহ করে নেয়। তারপর মামলা করার জন্য কিংবা মিমাংসা করার কথা বলে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। যা ভেক্টিম দিতে বাধ্য হয়। এই টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা তাদের গ্রুপের মেম্বার তানভীর হায়দার নামক এক এডভোকেটের বিকাশ এবং ব্যাংক একাউন্ট ব্যাবহার করে। সংগ্রহীত অর্থের কিছু একাউন্ট হোল্ডারের কাছে থাকে আর কিছু সরাসরি চলে যায় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুঞ্জর কাছে। টাকা নেওয়ার পর যখন ভেক্টিম সমস্য সলভের জন্য প্রেশার দেয় তখনি উল্টা ভেক্টিমের নামে মামলা করার হুমকি দেয়। যেমন, কারো নামে ফেসবুকে ফেইক প্রোফাইল খোলা হলে সে যদি ওই গ্রুপে সহায়তার জন্য যায় তবে তাকে ওই ফেইক আইডি বন্ধের জন্য গ্রুপ চেয়ারম্যান কে দিতে হয় ৫০০ টাকা৷ কোনো নারী অন্য কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা সমাধান চাইলে মামলা করা বাবত তার থেকে শুরুতে নেওয়া হয় ২০০০ টাকা, এবং পরবর্তিতে কয়েক ধাপে নেওয়া হয় মোটা অংকের টাকা৷ অনেক ক্ষেত্রে বিবাহিত মহিলাদের সমস্যা সমাধানের উপায় স্বরূপ তাদের উস্কানি দিয়ে ডিভোর্স ঘটিয়ে থাকে এই গ্রুপ থেকে। এছাড়াও নানা সময়ে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষদের পাশে দাড়ানোর নামে ত্রান এবং অর্থ সংগ্রহ করেও সেই ত্রান এবং অর্থ আত্মসাৎ করার একাধিক প্রমান পাওয়া গেছে এই গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে৷ সম্প্রতি খুলনার এক নারী তার পারিবারিক সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করেন ওই গ্রুপের চেয়ারম্যান ইফরিত জাহিন কুঞ্জের সাথে৷ কুঞ্জ তার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গ্রুপের খুলনা শাখার ২ ভলেন্টিয়ারের মাধ্যমে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয় সেই নারীর কাছ থেকে৷ পরবর্তিতে আর সেই মহিলার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করলে তিনি পুনরায় কুঞ্জের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন৷ এতে কুঞ্জ সেই নারীর বিরুদ্ধে মামলা করা এবং সামাজিক ভাবে লাঞ্চিত করার হুমকি দেয়৷ সেই নারী ২ ভলেন্টিয়ারের বিরুদ্ধে উল্টো থানায় মামলা করলে পুলিশ সত্যতা নিশ্চিত হয়ে ওই গ্রুপের ২ ভলেন্টিয়ারকে গ্রেফতার করে৷ বর্তমানে তারা জেল হাজতে রয়েছে৷ এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাজানি হবার পর থেকে তুমুল সমালোচনা চলছে এবং বেরিয়ে আসছে আরো অনেক প্রতারনামূলক কর্মকান্ডের তথ্য৷ সম্প্রতি রাঙামাটির পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় সেখানকার মানুষদের সহায়তার নাম করে প্রচুর টাকা এবং কাপড় সংগ্রহ করে তারা৷ সেই অর্থ সেখানে না পাঠিয়ে তারাই আত্মসাৎ করে এবং সংগৃহীত কাপড় বিক্রি করে দেয় পুরান ঢাকার বেগম বাজারে৷ (তথ্য: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ভলেন্টিয়ার) ঢাকার মুগদার বাবার হাতে টানা ৮ বছর ধর্ষণের শিকার হওয়া এক তরুণী সহযোগিতার জন্য সেই গ্রুপে যোগাযোগ করে। তারা তাকে সহায়তার জন্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করলেও মেয়েটিকে ১ টাকাও দেয়নি এবং মেয়েটির কোনো খোজ নেয়নি। এছাড়াও, অগ্নিদগ্ধ হওয়া সুমি নামের এক মেয়ের জন্য প্রায় ১ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান আত্মসাৎ করার প্রমান পাওয়া গেছে এই গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ভলেন্টিয়ারদের বিরুদ্ধে। এই ব্যাপারে JFWBD গ্রুপের সাবেক ডিরেক্টর (সাইবার) এবং সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম এনালিস্ট মাহাবুবুর রহমান বলেন, “ভালো কাজ করার উদ্দেশ্যে যুক্ত হয়েছিলাম JFWBD এর সাথে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। মামলার কাজে অনিয়ম, মামলায় গাফিলতি, আক্রান্ত বাদীর কাছে থেকে অর্থ গ্রহন, ভূয়া মামলার ভয় দেখানো, বন্যার কথা বলে টাকা জনগন থেকে উঠিয়ে তার হিসেব পাবলিশ না করা, বন্যার জন্য উঠানো কাপড় বিক্রি করা, ইফতার ও ত্রাণ প্রদানের লক্ষে জনগনের থেকে অর্থ উঠিয়ে তা হতে অর্থ আত্মসাৎ করা, মুগদা ভিক্টিম আর সুমি এর কেসে মোট ৫,০০,০০০ টাকার হিসেব না পেয়ে আমি যখন তাদের প্রশ্ন করি তখন তারা উত্তর দিতে পারে নি। বিনিময়ে মিথ্যে তথ্য উপস্থাপন করে আমাকে মিথ্যে দোষ দিয়ে ৪,৫০,০০০ সদস্য সমৃদ্ধ গ্রুপে পোস্ট করে অপমান করে। যার কারনে আমি গ্রুপ এবং তাদের অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হতে নিজেকে সরিয়ে নেই। যখন আমি JFWBD এর গত ২-৩ মাসের সব কুকীর্তি প্রচার করতে থাকি তখন তারা হুমকি দিতে শুরু করে এবং আমাকে গুম করার চেষ্টা ও করে। অনলাইনে অপপ্রচার এর পাশাপাশি অফলাইনেও তার লোকেরা আমার পিছনে লাগে। তখন ও সবার সামনে যখন আমি সমস্যা গুলো তুলে ধরি আমাকে নানা ভাবে চাপ দিয়ে থামিয়ে রাখা হয়। কিন্তু ২৫শে আগস্ট, ২০১৭ তে খুলনায় হওয়া মামলার পর সবার সামনে এসে যায় তাদের কুকীর্তি। আমি আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি অতি শীঘ্রই” (ফেসবুক লাইভে মাহবুবুর রহমানের বিস্তারিত বর্ণনা দেখতে এখানে ক্লিক করুন ) এছাড়াও ক্রাইম রিসার্স এন্ড এনালাইসিস (CRAF) ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জেনিফার আলম বলেন, “কুঞ্জর সাথে আমার সম্পর্ক ভাল ছিল। ও একজন ছোট মেয়ে হিসেবে খুব ভাল ইনেশিয়েটিভ নিয়েছিল। আমি ওকে প্রমোট করেছি, নিউজ করেছি। ওকে হেল্প করার ট্রাই করেছি। আমি আমার অবসর সময়টুকু স্ট্রিট চাইল্ড এবং ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড মানুষ এর সাথে কাজ করি। আমি সব কিছু ফেইসবুকে দেই না। মাঝে মাঝে ইন্সপায়ার করতে কিছু ছবি দেই। কুঞ্জ অটুকু দেখেই সেগুলোই ব্যবহার কররতে চায়। ও আমাকে জানায় আমি হেল্প এইড ফাউন্ডেশন এর হেড হতে পারব। তার বদলে আমার কাজ করা সব ছবিতে হেল্প এইড এর লোগো যাব।আর এর বদলে ওরা ফান্ড আনবে ফরেনার, কারন দেশি ফান্ড এর চাইতে এসবে ফরেন ফান্ড পাওয়া ইজি। আমি ত কাজ ই করতে চাই, আমি এখন ২ টা কাজ করি ফান্ড থাকলে ২০০ কাজ করতে পারব। সাথে আছে ফেম আর প্রচার। কারন হেল্প এইড আর জাস্টিস ফর ওমেন অনেক ফেমাস কুঞ্জর ভাষায়। তখন আমি প্রশ্ন করি- আমার নিজের করা কাজ যেগুলা ১/৩ ফেবু তে দেই এতেই যদি একটা ফাউন্ডেশন এর দুই বছর এর কাজ দেখান যায়। তাহলে ওদের এই ফেম আর টাকা কি শুধু ফাপড় এর উপরে আসে? আর সেই টাকা দিয়ে অরা কি করে? কারন ওদের ভিজিবল কোন কাজ নাই। শুধু এক বছরে আমি একটা ইফতার ইভেন্ট করতে দেখেছি। আর এত ভলান্টিয়ার আর এত লোক কি কাজে ইউস করে ওরা? তখন অদের একজন এডমিন আমাকে জানায়, আপা আপনি ভাল মানুষ। এত প্যাচ এ আইসেন নাহ। আপনার সব ইউস করবে।আপনি বিতর্কিত হয়ে যাবেন। অলরেডী অনেক টাকার গরমিল ভিতরে আছে। পরে আপনাকে ফাসায় দিবে। আমি সরে আসি। আমাদের ইন্সটিটিউশন ফ্রি সার্ভিস দেয় তাই ও আমাদের এটা অফ করতে ওর পরিচিত ক্ষমতাবান দের কে আমাদের পিছনে লাগায় দিয়েছে। সবার কাছে মিথ্যা বদনাম করেছে। আমাদের পিছনে ফেইক আইডি আর স্প্যামার লাগায় দিসে। আমাদের জেনারেল সেক্রেটারি কে মেয়ে দিয়ে টোপ দেওয়াইসে। না পেরে জংগি বানায়ে সাস্পেক্ট হিসাবে জেলে দেবার প্ল্যান করেছিল। ওই টার শট অদের এডমিন ই দিয়েছে আমাকে। আমি ফেসবুকে তা পোস্ট দিব” ওই গ্রুপের সাবেক চট্ট্রগ্রাম ডিস্ট্রিক্ট এডমিনিস্ট্রেটর রওনক মিম বলেন, “আমার আসলে বিতর্কিত গ্রুপ টা নিয়ে কথা বলার ইচ্ছা ছিলোনা, কিন্তু উনারা আমাকে বাধ্য করলেন বলতে। কম্বল ইভেন্টে ভলেন্টিয়ার রা যা টাকা দিয়েছে তা দিয়েই আমি কম্বল কিনি। প্রায় ৫০০০ হয়েছিলো। চেয়ারম্যান ম্যাডামের ৫০০০ টাকা দেয়ার কথা ছিলো উনি তা দেয় নি। আমার বড় আপু থেকে আমি ২০০০ টাকা কালেক্ট করে দি তাও উনি বলেন আমার বোনের কলিজা ছোট। উনি সেখানে বলসেন উনি আর উনার ভাইস চেয়ারম্যান এক কাপড়ে সারা দেশে কম্বল বিলাইসে, আমার প্রশ্ন জীবনে বের হয়ে রাস্তায় হেটে কম্বল বা অন্য কিছু দিসিলেন? জীবনে? আমি উনাদের গ্রুপেই কথা গুলা বলতাম কিন্তু উনারা আমাকে ব্যান দিয়েছেন। ব্যানের কারন জানতে চাওয়ায় চেয়ারম্যান আমাকে ছোট লোক বলেছে। সুমির টাকার হিসাবে গোলমাল হওয়ার কথা চেয়ারম্যান আর্বিটার ও ভাইস চেয়ারম্যান কে জানানোর পর ও কেন তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি?” এছাড়াও ইউটিউবার ও অনলাইন একটিভিস্ট তাহসিন রাকিব এই ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, “দীর্ঘদিন ধরেই কিছু ব্যাক্তি মানুষের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে ফেসবুক থেকে প্রচুর পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারণার মাধ্যমে। কিছুদিন আগে আহসান হাবিব পেয়ার নামের এক ব্যক্তিকে এমন কর্মকান্ডের জন্য গ্রেফতার করেছিলো পুলিশ। আর এখন JFWBD গ্রুপের ইফরিত জাহিন কুঞ্জ, এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এমন ঘটনা বাড়তেই থাকবে। ওই গ্রুপ বন্ধ করে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। এর পাশাপাশি অনলাইন ইউজারদের যেখানে সেখানে আর্থিক লেনদেন বা অনুদান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি”
EmoticonEmoticon